ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় পাঁচদিনে ১১৩টি গবাদী পশুর মৃত্যু, পশু মালিকের মাঝে আতঙ্ক

cowwমিজবাউল হক :

চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে পাঁচ দিনে ১১৩টি গবাদী পশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় উপদ্রুত এলাকায় মেডিকেল টিম নিয়ে গিয়ে পশুর চিকিৎসা দিচ্ছে। হটাৎ করে ক্ষুরা রোগ দেখা দেয়ায় পশুর মালিকের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

প্রাণী সম্পদ বিভাগ বলছে, ক্ষুরা রোগের কারণে পশুর মৃত্যু হয়েছে। এটা ছোঁয়াচে। বর্ষা মৌসুমে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। এ রোগে একটি পশু আক্রান্ত হলে ৪০ কিলোমিটারে আর কোনো পশু থাকলে সেটিও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভনা রয়েছে। তবে পশুর মালিকেরা বলছেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। একপর্যায়ে রোগটি মহামারি আকার ধারণ করে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে মাতামুহুরী নদী থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে ১১ ও ১২ জুন বসতঘর ডুবে যায়। ১৩ জুন বিকেলে বৃষ্টি কমলে লোকালয় থেকে পানি নামতে শুরু করে। ওইদিন রাত থেকে পশুর ক্ষুরা রোগ দেখা দেয়। ১৪ জুন সকালে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে ৩০টি পশুর মরা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ১৩ জুন রাত থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ১১৩ টি পশু মারা গেছে।

দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, তাঁর তিনটি পশু মারা গেছে। ছোট বাছুরটির পেটে ঘা হয়। অন্য দুইটির পায়ের খুড়ি ও জিব্বায় ক্ষত দেখা দেয়। রোগটি সৃষ্টি হওয়ার একদিনের মধ্যে তাঁর এ তিনটি পশু মারা যায়।

মানিকপুরের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা রহিমা বেগম (৪০) বলেন, তাঁর স্বামী নেই। এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সংসার। পশু লালন-পালন করে বড় করে বিক্রি করেন। এতে সংসার চলে। এবারের ক্ষুরা রোগে তাঁর পাঁচটি পশুর মধ্যে দুইটি মারা গেছে। অন্য তিনটির চিকিৎসা চলছে। পশু দুইটি মারা যাওয়ায় দিহেশারা হয়ে পড়েছেন রহিমা।

এ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবির আহমদ, নজরুল ইসলাম, নুরুল আলম, মোহাম্মদ হোসেন ও ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল কবির, মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, তাঁদের প্রত্যেকের একটি করে পশু মারা গেছে। এ রোগটি এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে যে কৃষকেরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, সোমবার ও গত শনিবার দুইদিনে চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় কর্তৃক গঠিত ভেটেরিনারী মেডিকেল টিম ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত অন্তত দুই শতাধিক পশুকে চিকিৎসা দিয়েছে। তবে গতকাল সারাদিনে কোনো পশু মারা যাওয়ার খবর পাননি তিনি।

চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন ফেরদৌসি আকতার বলেন, মূলত বর্ষা মৌসুমে ক্ষুরা রোগ দেখা দেয়। বন্যা রোগটির নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। তবে সুরাজপুর-মানিকপুরে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে রোগটি সনাক্ত করার পর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছি। এখন রোগটি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। অন্যান্য এলাকায়ও ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা চলছে।

ফেরদৌসি আকতার বলেন, পশুর ভ্যাকসিনেশন করা থাকলে এভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়তো না। এজন্য কৃষকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

পশুর মধ্যে কিভাবে ক্ষুরা রোগ ছড়াচ্ছে সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ক্ষুরা রোগের প্রাথমিক অবস্থায় গবাদি পশুর জ্বর হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভিতর এবং পায়ের মাঝখানে ফোস্কা উঠে, পরে ফোস্কা ফেটে লাল ঘায়ের সৃষ্টি হয়। মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। ঠোঁট নাড়াচাড়ার ফলে সাদাসাদা ফেনা বের হতে থাকে এবং চপচপ শব্দ হয়। ক্ষুরের ফোস্কা ফেটে ঘা হয় এবং পা ফুলে ব্যথা হয়। ঘা বেশি হওয়ায় চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। মাছি ঐ ঘায়ে ডিম পাড়ে। মাছির উপদ্রব ও রোগ জীবাণুর আক্রমণে ঘায়ের ব্যথায় পশুর জীবন বিষিয়ে ওঠে। ফলে পশু এমনভাবে পা ছুঁড়তে থাকে যেন মনে হয় পায়ে কিছু লেগে আছে। গাভীর ওলানেও ফোস্কা হতে পারে যার ফলে ওলান ফুলে উঠে এবং দুধ কমে যায়। ক্ষুরা রোগ হওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে শুকনা জায়গায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাদা বা পানিতে রাখা যাবে না। বিশেষ করে খামারে গবাদি পশু পালন বা একসাথে একাধিক পশু পালনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ রোগ যেহেতু মারাত্মক ছোঁয়াচে প্রকৃতির সেহেতু আক্রান্ত পশুকে অন্যত্র নেয়া বা বাইরের কোনো পশুকেও আক্রান্ত এলাকায় আনা ঠিক হবে না। আক্রান্ত এলাকার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার সকল সুস্থ পশুকে অবিলম্বে এ রোগের টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: